‘রাজ্য কোষাগারের অবস্থা সঙ্গীন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কার্নিভাল হচ্ছে’, প্রেস বিবৃতি আইএসএফের

  • By UJNews24 Web Desk | Last Updated 02-09-2022, 02:42:20:pm

দুর্গাপুজোর এক মাস আগেই বাংলায় আগমনীর বোল। কলকাতার পুজোকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ সম্মান, তাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হল রাজপথে। জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড পর্যন্ত এই শোভাযাত্রায় উপচে পড়েছে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ভিড়। ইতিমধ্যেই পুজো কমিটিগুলিকে ৬০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদানের কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিসর্জন নিয়ে কার্নিভালও এবার আরও রঙিন হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে উৎসবে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলল আইএসএফ।

এক প্রেস বিবৃতিতে আইএসএফের সাধারণ সম্পাদক (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি) বিশ্বজিৎ মাইতি জানান, ‘ভারতের সংবিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্র সমস্ত ধর্মকে সমান চোখে দেখবে এবং সমদূরত্ব বজায় রাখবে। রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম হবে না। রাষ্ট্র কোনও বিশেষ ধর্মকে উৎসাহিতও করবে না। হালফিল ভারতে শাসকগোষ্ঠী সংবিধানের এই মূল নির্যাসটিকে ঘুলিয়ে দিচ্ছে। তৃণমূলকংগ্রেস শাসিত পশ্চিমবাংলাতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সাংস্কৃতিক নীতি নিয়ে চলেছেন সেটা একদম সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণার পরিপন্থী।’

প্রেস বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘এমনিতে রাজ্য কোষাগারের অবস্থা সঙ্গীন। তা সত্ত্বেও কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কার্নিভাল হচ্ছে। দুর্গোৎসবের জন্য ব্যয়, অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে সরাসরি মদত — এগুলি সরাসরি সংবিধানকেই লঙ্ঘন করছে। অনেক সময় উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে এই কাজে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু আবারও অন্য কায়দায় যেমন জনস্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে কিংবা ‘নিরাপদে গাড়ি চালান’- এই স্লোগানের আড়ালে উৎসব করা হয়। কিন্তু এর প্রভাবে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ তথা সংস্কৃতি মিশে যায়। ফলে রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ক্ষুণ্ণ হয় এবং একটা ধর্মীয় সংখ্যাগুরুর প্রভাব-প্রতিপত্তি ও হিজেমনির উদ্ভব হয়। তাতে অন্যান্য আদিবাসী-তপশিলি-সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি প্রান্তসীমায় সরে যায়। আজ পয়লা সেপ্টেম্বর রাজ্য কোষাগার থেকে অর্থ খরচ করে বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উৎসবে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কোনও ধর্মের উৎসব পালনের বিরোধী নই। আমাদের সংবিধান প্রত্যেককে ধর্মাচরণ করার পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। এটা মানুষের মৌলিক অধিকার।’

আইএসএফের বক্তব্য, ‘রাষ্ট্র কোনও ধর্মীয় উৎসব পালন করবে না, মদত দেবে না। ধর্মাচরণকে সংস্কৃতি বলে চালানো, এটা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সূক্ষ্ম নীতি। এটার ফলে বাঙালীর সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। বাঙালির উৎসব — পয়লা বৈশাখ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, নবান্ন উৎসব, শীতকালীন নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সেগুলির মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাটা মুখ্য। এগুলি সরকার পালন করতেই পারে। সরকার স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, সংবিধান দিবস পালন করতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার সংবিধান দিবস পালন করে না। সংবিধান আমাদের পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো হয় না। কিন্তু বিশেষ একটি ধর্মের উৎসবকে সরকারি কোষাগার থেকে মদত দেওয়া হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে আমরা সকলকে তাই আহ্বান করি সংবিধান বাঁচান, দেশ বাঁচান, সংস্কৃতি বাঁচান, সমাজ বাঁচান।’

যদিও এই উৎসবকে ধর্মের বেড়াজালে বাঁধতে রাজি নন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিনের শোভাযাত্রা থেকে তিনি বলেন, “রাস্তার দু’ধারে কত সংখ্যালঘু ছেলে মেয়েরা দাঁড়িয়ে পুজোর মিছিলকে উৎসাহিত করছেন। এটাই বাংলার সংস্কৃতি। বিরোধীরা বাঙালির, বাংলার এই আবেগটা বুঝবে না।” ফিরহাদের সংযোজন, “ধর্ম নিয়ে তৃণমূল খেলে না। সর্বধর্মকে তৃণমূল শ্রদ্ধা করে, ভালবাসতে শেখায়। যেটা হচ্ছে, সেটা সাধারণ মানুষের উৎসব। সর্বধর্মের মানুষ এসেছেন। শুধু শুধু এটার সঙ্গে ধর্মকে জুড়ে দেওয়াটা অন্যায়।”

 

Share this News

RELATED NEWS